দেশের স্বাস্থ্য বাজেট অপ্রতুল

দেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্য জাতীয় বাজেটের বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা বরাবরই সামাজিক খাত যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দরিদ্রদের নিরাপত্তা বেষ্টনী, কর্মসংস্থান, বেকারত্ব নিরসন, গণ-পেনশন ইত্যাদি খাতে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবী জানিয়ে আসছে। বিগত সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট স্বাস্থ্য বিষয়ক সামাজিক খাতে বরাদ্দ বেশী দেখানোর কৌশল হিসাবে সামরিক বাহিনী-হাসপাতাল, পুলিশ-হাসপাতাল, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিচালিত-হাসপাতাল এবং সরকারি অনুদান-প্রাপ্ত বেসরকারি হাসপাতালে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বরাদ্দ স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ হিসেবে দেখাতো। এর ফলে সামরিক বা পুলিশ খাতে প্রকৃত বরাদ্দ কম দেখানো যেতো।

যাহোক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাজেট অবশ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই ব্যবহার করে থাকে। স্বাস্থ্য বাজেট ব্যয়ে অপচয়, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ব্যয়, অতি ব্যয় তো হয়ই। তারপরও অর্থ বছর শেষে বাজেট বাস্তবায়নের হার আশানুরূপ হয় না।

স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অদক্ষতা নিয়ে একটি সরল সমীকরণ দাঁড় করানো হয়

কম অর্থ ব্যয়ের একটি সরল সমীকরণ দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়। তা হলো স্বাস্থ্য প্রশাসন পরিচালনায় অনভিজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ এবং ফলে তাদের অদক্ষতা। প্রকৃত সত্য অন্য রকম। এসব চিকিৎসক প্রশাসনে নিযুক্ত হওয়ার আগে দীর্ঘ সময় ক্লিনিক্যাল কাজেই থাকেন। প্রাইভেট প্রাকটিস করে বাড়তি আয় করে সচ্ছল জীবন যাপনের সুযোগ পান। অসৎ পন্থা অবলম্বনের প্রয়োজন পড়ে না। সে কৌশলও রপ্ত করার প্রয়োজন পড়ে না। প্রশাসনিক দায়িত্বে নিযুক্ত হওয়ার পর এই চিকিৎসকরা দেখতে পান যে, সৎভাবে সরকারি ব্যয় পরিচালনা করলে অডিট ম্যানেজ করতে সমস্যা হয়। উপরি দিয়ে অডিট ম্যানেজ না করলে অডিট আপত্তি হবেই। এই উপরি অর্থ ব্যয়ের হিসাবে গড়মিল করেই সমন্বয় করতে হবে। যা প্রকৃতপক্ষে হবে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া। কাজেই কেনাকাটা বা অর্থ ব্যয় না করাই ভালো। ক্রয়ও নাই। অর্থ ব্যয়ও নাই। অডিটও নাই। ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্যও নিতে হয় বিভিন্ন স্তরের প্রাক-অনুমতি। সেখানেও অনিয়মের অর্থ লাগে। সেসব খরচও নয়-ছয় করে সমন্বয় করতে হয়। এজন্যই তারা ক্রয় প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকেন। এটা অদক্ষতা নয়। সৎ মানুষদের ক্রয় প্রক্রিয়া বিষয়ে নিষ্ক্রিয়তা। সামান্য সংখ্যক চিকিৎসক কর্মকর্তা রাজনৈতিক বা উর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। অনিয়ম জেনেও অনিচ্ছায় ক্রয় করতে বাধ্য হন এবং অনেক সময় বিপদে পড়েন। আর কিছু অসৎ কর্মকর্তাও থাকেন। অনৈতিক পন্থায় লেনদেনের মাধ্যমে প্রশাসনিক অনুমোদন ও অডিট ম্যানেজ করতে তাদের বিবেক বাধা দেয় না। প্রশাসনিক অনুমতিও পেয়ে যান দ্রুত। গোঁজামিল দিয়ে হিসাব প্রস্তুত করেন। অডিট আপত্তি হয় না। হলেও অডিট আপত্তিগুলি হয় দুর্বল প্রকৃতির। সহজেই পার পেয়ে যান।

স্বাস্থ্য খাত বহির্ভূত অন্যান্য সরকারি খাতের ক্রয় দক্ষতা

স্বাস্থ্য খাত বহির্ভূত অন্যান্য সরকারি খাতের ক্রয় কার্যক্রম দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তেমন তোলা হয়না। এসব খাতে যারা কাজ করেন তাদের চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্রাকটিসের মত বৈকালিক ও সৎ পেশায় বাড়তি উপার্জনের সুযোগ নাই। চাকুরী জীবনের সময়টাতে প্রশাসনিক অনুমতি সংগ্রহ ও অডিট ম্যানেজ করার কৌশল রপ্ত করে ফেলতে পারেন।

প্রশাসনিক অনুমতি সংগ্রহ ও অডিট ম্যানেজ করতে হয়

স্বাস্থ্যসহ সব খাতেই প্রশাসনিক অনুমতি সংগ্রহ ও অডিট ম্যানেজ করার জন্য অনৈতিক লেনদেনের প্রয়োজন হয়। সৎ কর্মকর্তারা এ ধরণের কাজ থেকে নিজেদের দূরে রাখার চেষ্টা করেন। ফলে তাদের গায়ে অদক্ষতার তকমা পড়ে। সমস্যাটি চিকিৎসক স্বাস্থ্য প্রশাসকের অদক্ষতার নয়। সমস্যাটি সিস্টেমের এবং দুর্নীতির। সরকারি সিস্টেমের সর্বস্তর থেকে ঘুষ ও দুর্নীতি নির্মূল করতে পারলে এসব অসুবিধা থাকবে না।